অনেক নারী-পুরুষই অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভোগেন। তবে পুরুষের চেয়ে নারীদের পেট ও কোমরে বেশি মেদ জমার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আবার ওজন কমাতে গেলেও এই দুই অংশের মেদ কমানোও বেশ সময়ের ব্যাপার। তবে কেন নারীদের পেট ও কোমরে কেন বেশি মেদ জমে?

চিকিৎসকেরা বলছেন, বিয়ে, স্থান বা পানি পরিবর্তনের চেয়েও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হরমোনের পরিবর্তন। যেকোনো কারণেই তা হতে পারে। হরমোনের ঘাটতি বা আধিক্য, কোনোটিই শরীরের জন্য ভালো নয়। পেট, কোমরে অতিরিক্ত মেদ জমার পিছনে দায়ী  টাইপ-২ ডায়াবেটিস, প্রদাহজনিত সমস্যাও।

woman1

এ ধরনের সমস্যার মূল কারণ কিন্তু হরমোনের সমতা নষ্ট হওয়া। পেট, কোমরের মেদের সঙ্গে কোন কোন হরমোনের যোগ রয়েছে? চলুন জেনে নিই-

রজোনিবৃত্তি ও ইস্ট্রোজেন 

রজোনিবৃত্তি বা মেনোপজের সময় হলে দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমতে শুরু করে। সারা শরীরে স্নেহপদার্থের বণ্টনে সাহায্য করে এই হরমোনটি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে মেদ জমার প্রবণতাও বাড়তে থাকে।

woman3

মানসিক চাপ ও কর্টিসল

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কিন্তু কোমর, পেটে মেদ জমার পরিমাণ বাড়তে থাকে। কেননা, মানসিক চাপ বাড়তে থাকলে শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণও বাড়তে থাকে। এটি দেহের নিম্নাংশে মেদ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে পেট আর কোমরের মেদ বাড়ে।

ইনসুলিন হরমোনের সমতা

রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে নষ্ট হয়ে যায় ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা। শরীরচর্চা না করলে কিংবা খাদ্যাভ্যাসের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও এমন সমস্যা হতে পারে। ফলে কোমর, পেটে মেদ জমে।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, ইনসুলিন হরমোনের সমতা নষ্ট হওয়ার পিছনে জিনেরও ভূমিকা রয়েছে।

জীবনধারণের যে ভুলে পেটের মেদ বাড়ে

যদিও হরমোনের পরিমাণ ওঠানামা করার কারণে নারীদের পেট ও কোমরে মেদ জমতে পারে। তবে এর পাশাপাশি জীবনধারণের ভুলেও বাড়তে পারে মেদ। যেমন-

শর্করাজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া

শর্করা ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার ইনসুলিন প্রতিরোধ ও ওজন বাড়াতে অবদান রাখে। এই খাবারগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, ফলে ইনসুলিন উৎপাদন ও চর্বি সঞ্চয় বাড়ে। এছাড়া অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণ, বিশেষ করে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলেও ওজন বাড়ে, যা প্রায়শই পেটের চারপাশে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়।

শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব

একটি আসীন জীবনধারা পেটের ওজন বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী। নিয়মিত ব্যায়াম না করলে, শরীর শক্তির জন্য চর্বি পোড়ানোর পরিবর্তে সঞ্চয় করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শারীরিক কার্যকলাপ, বিশেষ করে যে ব্যায়ামগুলি পেটের পেশীগুলোকে লক্ষ্য করে, পেটের চর্বি কমাতে ও সামগ্রিক ফিটনেস উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

দুর্বল ঘুমের অভ্যাস

ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ঘুমকে প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়, তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপর্যাপ্ত ঘুম বা অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাসগুলো হরমোনের মাত্রা ব্যাহত করতে পারে। এতে করে ক্ষুধা বাড়ে ও পেটে চর্বি জমারও ঝুঁকি বাড়ে। এজন্য পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা সম্ভব।